এই যুদ্ধ গাজার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

ইসরায়েলের ভেতর হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত কার্যত একটি যুদ্ধক্ষেত্র। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে প্রায়ই গুলি ও বোমা বর্ষণ হচ্ছে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে পুরো মাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা এবং এর নানা সমীকরণ নিয়ে লিখেছেন শাকিল আনোয়ার
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১: ৩৬
দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ বাহিনীর একটি মহড়া
দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ বাহিনীর একটি মহড়াছবি: এএফপি

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে, তার রূপ এমন ভয়াবহ হতে পারে যে হামাস-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধকে তখন নেহাত ছোটখাটো ‘ধুলা ওড়ানো কোনো ধস্তাধস্তি’ বলে মনে হবে।

ইসরায়েল ও লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাত্মক কোনো যুদ্ধ লাগার ঝুঁকি এবং তার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে গত মার্চে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) এক নিবন্ধে ওই মন্তব্য ছিল।

সেই যুদ্ধ কি সত্যিই লাগতে চলেছে? গত দুই দিনে সৌদি আরবসহ আটটির মতো দেশ তাদের নাগরিকদের দ্রুত লেবানন ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আশঙ্কার পারদ যে দিন দিন চড়ছে, সন্দেহ নেই। সে কারণে গাজার যুদ্ধ থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর এখন ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তের দিকে।

যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধ বেধে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘সামান্য কোনো ভুল পদক্ষেপে এমন ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হবে, যার পরিণতি অকল্পনীয়। এই অঞ্চলের ও বিশ্বের মানুষ এটা দেখতে চায় না যে লেবাননের পরিণতি গাজার মতো হোক।’

জানুয়ারিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিজবুল্লাহকে হুঁশিয়ার করেছিলেন, বৈরুতকে তিনি গাজা বানিয়ে ছাড়বেন। অনেক পর্যবেক্ষক এখন বলছেন, ঘটনাপ্রবাহ সেদিকে গড়ানোর অনেক আলামত চোখে পড়ছে। ১৮ বছর পর হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল নতুন করে একটি পুরোদস্তুর যুদ্ধের মুখোমুখি।
পরিস্থিতি আসলে কতটা বিপজ্জনক

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতর হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত কার্যত একটি যুদ্ধক্ষেত্র। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়া ও ইসরোয়েলি সৈন্যদের মধ্যে প্রায়ই গোলা বিনিময় হচ্ছে। লেবাননের ভেতর, এমনকি রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর স্থাপনা ও সামরিক নেতাদের টার্গেট করে কয়েকবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

গত সপ্তাহেই বিমান হামলা চালিয়ে সিনিয়র একজন হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। জবাবে পরপর দুই দিন হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের বিভিন্ন গ্রাম ও শহর লক্ষ্য করে প্রায় তিন শ রকেট ছুড়েছে।

হানাহানিতে গত ৯ মাসে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে চার শর মতো লোক মারা গেছেন। ইসরায়েলে মারা গেছেন ৩০ জন। ভয়ে দুই দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শহর ও গ্রাম থেকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের কাছে প্রায় ডজনখানেক শহর এখন বলতে গেলে মানবশূন্য। প্রায় ৭০ হাজার মানুষকে তেল আবিব, জেরুজালেম ও হাইফার মতো শহরে নিয়ে বিভিন্ন অস্থায়ী বাসস্থানে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ

এটা ঠিক যে সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে থেকে সংঘাত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলছে। ২০০৬ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধও হয়েছে তাঁদের মধ্যে। কিন্তু এবার কয়েকটি কারণে পরিস্থিতি বিশেষ স্পর্শকাতর।

প্রথমত, ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের জেরে ইসরায়েলিদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। হুমকি সহ্য করার মনোভাবে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে তাদের।

হামাস যদি এভাবে তাদের দেশের ভেতর ঢুকে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা এবং আরও কয়েক শ মানুষকে অপহরণ করতে পারে, তাহলে আরও শক্তিধর শত্রু হিজবুল্লাহ কী কাণ্ড ঘটাতে পারে, তা নিয়ে ভয় ঢুকেছে বহু ইসরায়েলির মধ্যে।

তাদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে যে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধও আজ না হয় কাল অবধারিত। তাই এখনই হেস্তনেস্ত করে ফেলা দরকার। কট্টরপন্থী রাজনীতিকদের বক্তব্য-বিবৃতি, মিডিয়ায় আলোচনা ও বিতর্ক থেকে এ মনোভাব সহজে আঁচ করা যায়।

দ্বিতীয়ত, সীমান্তে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতি নেতানিয়াহু সরকারের ওপর প্রচণ্ড রাজনৈতিক চাপ তৈরি করেছে। এসব মানুষ বলছেন, হিজবুল্লাহকে সীমান্তের কাছাকাছি থেকে না সরালে, তাঁরা ঘরে ফিরবেন না। ৭ অক্টোবরের ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর ওপর জনমনে নজিরবিহীন অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এ মাসেই পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরায়েলের ইহুদিদের মাত্র ২৫ শতাংশ এই সরকারের ওপর এখনো আস্থা রাখতে পারছে।

ইসরায়েলি গবেষণা সংস্থা জিউয়িস পলিসি ইনস্টিটিউটের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, সরকার যদি ‍‘পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করতে নামে, ইসরায়েলের ইহুদি জনগোষ্ঠীর ৬২ শতাংশ তা সমর্থন করবে। মানুষের আস্থা ফিরিয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এখন নেতানিয়াহুর এক নম্বর অগ্রাধিকার। সুতরাং তিনি হয়তো মনে করছেন, উত্তর সীমান্তে আরেকটি রণাঙ্গন খুললে তাঁর রাজনৈতিক সুবিধা হতে পারে।

বৈরুতে গবেষণা সংস্থা কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের উপপরিচালক মোহানাদ হেজ হাজি সম্প্রতি লেবাননের একমাত্র ফরাসি ভাষার দৈনিক ল্য ওরিয়েন্টকে বলেন, তাঁর বিশ্বাস, যুদ্ধ হলে তা শুরু করবে ইসরায়েল। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানুয়ারিতে দেওয়া নেতানিয়াহুর একটি বিবৃতি উল্লেখ করেন।

নেতানিয়াহু বলেছিলেন, উত্তরের সীমান্তে ‘মৌলিক পরিবর্তন’ প্রয়োজন। তার অর্থ হলো, হিজবুল্লাহকে স্থায়ীভাবে সীমান্ত থেকে লেবাননের অনেক ভেতরে ঠেলে দিতে হবে, যা করতে ইসরায়েলকে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু করতে হতে পারে। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে কয়েক দিন আগে প্রকাশিত ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রক্ষায় লেবানন সীমান্তে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারেন নেতানিয়াহু।

তেমন ইঙ্গিত স্পষ্ট। ইসরায়েলের সেনাপ্রধানসহ সরকারের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা কিছুদিন ধরে বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি ও কৌশল এখন চূড়ান্ত। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা যাচি হানেগভি এবং নীতি ও কৌশলবিষয়ক মন্ত্রী রন ডেনভার সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করেছেন। ইসরায়েলি ও মার্কিন মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে আমেরিকার কাছ থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আদায় ছিল সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
হিজবুল্লাহর শক্তি

আমেরিকা ও ইসরায়েলের ভেতর অনেক মানুষ সন্দিহান, একই সঙ্গে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ করার ক্ষমতা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আসলে কতটা রয়েছে। এমনিতেই হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের ৯ মাস পরও কোনো ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আর হিজবুল্লাহ সামরিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে হামাসের চেয়ে বহুগুণে পারদর্শী।

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা গত ১৯ জুন প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাফ অরিসিয়নকে উদ্ধৃত করে বলেছে, হিজবুল্লাহর হাতে হামাসের ১০ গুণ অস্ত্র আছে এবং এসব অস্ত্র অনেক ভারী ও আধুনিক। ধারণা করা হয়, হিজবুল্লাহর প্রশিক্ষিত সক্রিয় যোদ্ধার সংখ্যা এখন ৩০ হাজার। রিজার্ভ যোদ্ধা আরও কমপক্ষে ২০ হাজার।

রাশিয়া ও ইরানের মিত্রশক্তি হিসেবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়ে আধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ পরিচালনায় তাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা হয়েছে। ইরান ও রাশিয়ার কাছে থেকে প্রচুর আধুনিক অস্ত্র তারা পেয়েছে ও পাচ্ছে। প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে ধারণা পাওয়া যায়, হিজবুল্লাহর হাতে এখন ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ স্বল্পপাল্লার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ট্যাংক-বিধ্বংসী রকেট এবং ইরানের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক ড্রোন।

২০০৬ সালের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ যেভাবে ইসরায়েলি বাহিনীকে মোকাবিলা করেছিল, তাতে পশ্চিমা অনেক বিশেষজ্ঞ বিস্মিত হয়েছিলেন। গত ১৮ বছরে তাদের শক্তি বহুগুণে বেড়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইসরায়েলজুড়ে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনায় বড় ধরনের আঘাত করার ক্ষমতা এখন হিজবুল্লাহ অর্জন করেছে। বিপুল সংখ্যায় রকেট, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তারা ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আংশিকভাবে হলেও অকার্যকর করতে সক্ষম।

তা ছাড়া যুদ্ধ বাধলে পাহাড়, গুহা, বনাঞ্চলে আবৃত দক্ষিণ লেবাননের ভৌগোলিক চরিত্র হিজবুল্লাহকে অনেক সুবিধা দেবে। কয়েক দশক ধরে পুরো অঞ্চলে তারা টানেল আর বাংকারের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। সেই প্রতিরক্ষা দুর্গ এখন কয়েক গুণ শক্ত। লড়াই বাধলে তাদের অস্ত্রের চালান বন্ধ করাও কঠিন হতে পারে ইসরায়েল বা আমেরিকার জন্য। কারণ, হিজবুল্লাহকে অস্ত্র ও রসদ সরবরাহের জন্য ইরাক ও সিরিয়ার ভেতর দিয়ে ইরান কার্যকরী একটি স্থল-ব্রিজ তৈরি করেছে।

যুদ্ধ বাধলে তা দ্রুত পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, যুদ্ধ লাগলে ইয়েমেন, ইরান, সিরিয়া ও ইরাকে হিজবুল্লাহর সমর্থক মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় হবে। লেবাননে হিজবুল্লাহ-সমর্থিত আল-আকবর পত্রিকা ইরাকি মিলিশিয়া নেতা কাজেম ফারতুসকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘লেবাননে যদি ইরাক থেকে যোদ্ধার দরকার হয়, তাহলে আমরাই প্রথম সেখানে যাব।’
মধ্যস্থতার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলকে এসব ঝুঁকির কথা বুঝিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের বছরে গাজায় যুদ্ধ নিয়ে নিজের দলের ভেতর এমনিই বিভেদ-অসন্তোষে চাপে রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। লেবাননে আরেকটি যুদ্ধ চাইছেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্র এ কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ দূত অ্যামস হোচেস্টাইন, যিনি ২০২২ সালে ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মেটাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, গত কয়েক মাসে কমপক্ষে পাঁচবার ইসরায়েল ও লেবানন সফর করেছেন।

জানা গেছে, সীমান্ত থেকে কমপক্ষে আট থেকে নয় কিলোমিটার সরে আসার জন্য তিনি লেবানিজ সরকারের মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। বদলে লেবাননের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে যে ১৩টি এলাকা নিয়ে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ, তা সমাধান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

হিজবুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায়। এ কারণে কতটা আস্থা তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর রাখবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, লেবাননের বর্তমান সংকটের বিবেচনায় হিজবুল্লাহ এখন ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোদস্তুর কোনো যুদ্ধ চায় না। অন্যদিকে গাজার যুদ্ধ নিয়ে দেশের বাইরে ও ভেতরে চাপে পড়া নেতানিয়াহু মুখে যা-ই বলুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শতভাগ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ছাড়া যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলতে ১০ বার ভাববেন। সেই ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন।

ইসরায়েলের চ্যানেল ফরটিন টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, লেবানন সীমান্তে চলতি অবস্থা পরিবর্তনে তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু তিনি আশাবাদী তার আর দরকার হয়তো হবে না। তিনি বলেন, যে তিনজন সহযোগীকে তিনি ওয়াশিংটন পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে তাঁকে ইতিবাচক কথা জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী গালান্ট সাংবাদিকদের বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে এখনো তাঁরা যুদ্ধ চান না​। এখনো কূটনীতিই তাঁদের অগ্রাধিকার। এই দুই ইসরায়েলি নেতার কথায় আঁচ পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মধ্যস্থতাকে তাঁরা এখনই উড়িয়ে দিতে চাইছেন না।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ এখনো নিয়ন্ত্রিত আচরণই করছে। তবে বর্তমান উত্তেজনা-সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চললে যেকোনো সময় এক পক্ষের সামান্য ভুল সিদ্ধান্তে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। দুই পক্ষেরই কিছু রেডলাইন রয়েছে।

ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর কৌশলগত কোনো অবস্থানে হামলা করে বসে অথবা হিজবুল্লাহর কোনো রকেট যদি ইসরায়েলের বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর কোনো স্থাপনায় আঘাত করে, পরিস্থিতি সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর ইসরায়েল যদি যুদ্ধ শুরু করেই দেয়, যুক্তরাষ্ট্র তাকে জোর করে থামাবে, সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

মন্তব্য করুন